তোমার জন্য ফিরে আসা !! Part- 08 & 07
![]() |
তোমার জন্য ফিরে আসা !! Part- 08 & 07 |
“আজ তোমাকে আমার অতীতের কথা বলবো, তুমি আমাকে কতো বড় উপকার করলে তুমি নিজেও জানো না। তুমি সব কাজ ঠিক মতো করতে পেরেছো তার জন্য আমি তোমার কাছে চিরকৃতজ্ঞ ”
“আপনি তো আমাকে মহারানী বলেন তাহলে আপনার মহারানী আপনার জন্য এতোটুকু কাজ করতে পারবে না? ”
“হ্যাঁ মহারানী বলাটা আমার স্বার্থক হলো ”
“আচ্ছা এবার বলুন তো আপনার অতীতের কথা ”
“আমার বাবা অনেক জাদু জানতো। তার অনেক নামডাক আছে, বাড়ির অর্থিক অবস্থা ভালো। একদিন বাগান বাড়ির জাদুমন্ত্রী আমাদের বাড়িতে আসে। সবাই উনাকে জাদুমন্ত্রী নামে চিনে। বাবার থেকে উনি নতুন নতুন অনেক জাদু শিখতে শুরু করে। বাবার সাথে সব সময় একটা হীরার আংটি থাকতো। উনি একদিন বাবার কাছে তার হীরার আংটি চায়, বাবা দিতে রাজি হলো না বাবা বুঝতে পারে জাদুমন্ত্রী কালো জাদু নিয়ে চর্চা শুরু করে। ধীরে ধীরে নিজের শক্তি লাভ করার জন্য মানুষ খুন করে।মানুষের রক্ত, শরীরে হাড় নিয়ে অনেক শক্তিশালী হতে সক্ষম হয়। তারপরও সব রকমের শক্তি অর্জন করার জন্য তার লাগলে কোনো জাদুকরীর প্রিয় জিনিস। আর জাদুকারী হিসেবে আমার বাবাকে বেছে নেয়। বাবার সেই প্রিয় জিনিসটা হচ্ছে তার হীরার আংটিটা।”
আলিব এটকু দম নিয়ে আবার বলতে শুরু করে
“জাদুমন্ত্রী ছলে কৌশলে আমাদের বাড়িতে গিয়ে আমার বাবাকে খুন করে তার আংটি নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে, ঠিক সেই সময় আমি দেখে চিৎকার করে মাকে ডেকে আনতে জাদুমন্ত্রী তার কালো জাদু দিয়ে আমাকে আর আমার মাকে অভিশাপ দেয়”
“আপনি একদিন অভিশাপ মুক্ত হবেন। আপনার যা যা সাহায্য লাগবে আমি করবো কিন্তু আপনাকে কি অভিশাপ দিয়েছিলো সেটা তো বললেন না? ”
আলিব জানালা খুলে বাইরের দিকে তাকিয়ে বলে,
“আমার হাতে সময় নেই এখন চলে যেতে হবে তবে সামনে আমার আরো অনেক পরীক্ষা আছে আশা করবো তুমি আমার সাথে থাকবে ”
“হুম থাকবো ”
“আমার মহারানী যে এতো ভালো ”
“রাজামশাইয় আপনি যে কি বলেন, আমি ভালো না হলে আপনাকে কে বিপদ থেকে উদ্ধার করবে? ”
“সেটাই তো, নতুন মহারানী খুঁজলে বিপদ থেকে উদ্ধার হতে সময় লাগবে ”
“নতুন মহারানী লাগবে কেনো হুম, আমি আছি তো ”
“হাহাহাহাহ্, আসি এখন ”
আলিব চলে গেলো। ইভার বাকি রাত ঘুম হলো না। সকাল হতে ইভা এক কাপ চা বানিয়ে নিয়ে ছাঁদে গেলো। চায়ের কাপে চুমুক দিতে মনে পড়লো আলিবের কথা মানে ও বলেছি “যে কোনো জায়গায় ঘুরতে যেতে চাইলে নিয়ে যাবে ” ইভা সাথে সাথে আলিবকে ডাকে।
“এতো সকাল সকাল মহারানী আমাকে ডাকলো যে নতুন কোনো ইচ্ছে আছে নাকি? ”
“কেনো আমি শুধু আপনাকে প্রয়োজনে ডাকি, এমনি কি ডাকি না ? ”
“তা না তবুও আজকে অন্য রকম ”
“হুহ ”
ইভা একটা মুখ ভেঙ্গচি দিয়ে ছাঁদের কোণে চলে গেলো। আলিব ওর সামনে একগুচ্ছ কদম ফুল ধরে,
“বর্ষার একগুচ্ছ কদম ফুল আমার মহারানীর জন্য ”
ইভা কদম ফুল গুলো হাতে নিয়ে মুচকি হেসে বলে,
“ধন্যবাদ ”
“কিসের জন্য ডেকেছো সেটা তো বললে না? ”
“ইয়ে মানে আমি একটু সুন্দরবন যেতে চাই ”
“আচ্ছা বেশ নিয়ে যাবো ”
ইভা খুশিতে আত্মহারা হয়ে আলিব জড়িয়ে ধরে । এই সময়ে ইভার মা ছাঁদে এসে দেখে ইভা হাত দুটো সামনে একটু বাঁকা করে রেখেছে (কাউকে জড়িয়ে ধরলে হাত যেমন থাকে) এরকম অবস্থা দেখে ওর মা বললো,
-তুই এটা কিরকম ব্যায়াম করছিস।?
ইভা ওর মায়ের কথা শুনে সাথে সাথে আলিবে ছেড়ে দিলো।ইভা আলিবের দিকে তাকাতে খুব লজ্জা পেলো, আলিব মুচকি হেসে উঠলো। ইভার মা বললো,
-কি কথা বলছিস না কেনো?
-আচ্ছা মা তুমি তাড়াতাড়ি করে নাস্তা রেডি করো কলেজে যেতে হবে।
-হুম তুই নিচে আয়।
ইভা রুমে গিয়ে একটু সাজলো। তারপর নাস্তা করে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো । বাগান বাড়ির সামনে সাদা জবা ফুলের গাছ আছে সেখান থেকে দুটো জবা ফুল নিয়ে আলিবের হাতে দিলো। ইভা চোখে একপলকে সুন্দরবন চলে এলো। ইভা খুব খুশি হলো। সুন্দরবনের ভেতরে হাটতে আছে বেশ কিছুক্ষণ পরে ইভা লক্ষ্য করলো আলিব সাথে নেই তাহলে কোথায় গেছে? নির্জন বনে আশেপাশে কেউ নেই ইভার ভয় করছে ঠিক সেই সময় পুরুষ কন্ঠে একজন বললো!
[[আজকে দুটো পার্ট দিলাম তাই গল্পে পার্ট ছোট হয়েছে এটা বলবেন না। গল্পটা কেমন হচ্ছে তা গঠন মূলক কমেন্ট করে বলবেন ]]
চলবে,,,,,
তোমার জন্য ফিরে আসা !! Part- 09
“সুন্দরবনে এতো সুন্দর রমনী যেনো আসমান থেকে জমিনে পরী নেমে এসেছে ”
পাশ থেকে আরেক জন পুরুষলোক বললো,
“সুন্দরীকে হাত ছাড়া করা যাবে না, বোধ হয় পথ হারিয়ে ফেলেছে তাই আমাদেরও উচিত ওকে আমাদের আস্তানায় নিয়ে যাওয়া ”
“হাহাহাহ্ চল তুলে নিয়ে যাই ”
ইভার পাশে একটা গাছের ডাল পেলো সেটা হাতে নিয়ে বললো,
“খবরদার আমার কাছে কেউ আসবেন না তাহলে মেরে ফেলবো ”
“এই মেয়ে বলে কি, আমার চার জন আছি আর তুমি একা। আমাদের সাথে পুটিমাছের প্রান নিয়ে লড়াই করতে পারবে না ”
“আমার পুটিমাছের প্রান কি না সেটা তোদের দেখাচ্ছি দাঁড়া ” বলে ইভা চিৎকার করে বলতে লাগলো
“আলিব আপনি কোথায়? প্লিজ আমাকে বাঁচান ”
ইভার কথা শুনে আলিব সাথে সাথে চলে এসে। ইভা আলিবের পিছনে গিয়ে দাঁড়ায়। আলিব ইভার হাতে লোহার রট দিয়ে বললো,
“যাও শাস্তি দেও ”
“আমি পারবো না আপনি দেন ”
খারাপ লোকের মধ্যে একজন বললো,
“এই মেয়ে পাগল নাকি একা একা কথা বলে ”
“পাগল হোক আর যাই হোক আমাদের কাজ হলেই হলো” লোকগুলো মধ্যে একজন ইভার ওড়না টেনে ধরবে সেই সময় সোজা হয়ে গেলো নড়তে পারলো না।
ইভা এবার সাহস করে ইচ্ছে মতো খারাপ লোকগুলোকে একের পর এক লোহার রড দিয়ে আঘাত করলো। বেশ হাঁপিয়ে গেছে, ওদের আঘাত করা ছেড়ে দিলো। আলিব ওদের স্বাভাবিক করলো, ওরা ব্যাথায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
আলিব রাগ করে হেঁটে চলছে, ইভা পিছু পিছু হাঁটছে আর বলছে,
“আপনি আমাকে আবার একা ফেলে রেখে চলে যাচ্ছেন কেনো? একটু আগেই তো বিপদে পরেছিলাম ”
আলিব কোনো কথা বলছে না হেঁটে যাচ্ছে। ইভা দৌঁড়ে গিয়ে আলিবের সামনে দাঁড়ালো। আলিব মুখ ঘুরিয়ে নিলো। ইভা বললো,
“আপনার সমস্যা কি হ্যাঁ, কথা বলছেন না ”
“তোমার সাথে আমি কেনো কথা বলবো? তুমি তো নিজে নিজে চলতে পারো, ঘুরতে পারো ”
“আপনি তো আমাকে ফেলে রেখে চলে গিয়েছেন ”
“বাজে বক বক খুব ভালো করতে পারো ”
“বাজে বকবক কি করেছি? ”
“নিজে প্রকৃতি দেখে উধাও হয়ে গেছো আবার আমার দোষ দেও যে আমি তোমাকে ফেলে রেখে চলে গেছি। মেয়েদের সব জায়গায় একা একা চলাফেরা করা যায় না। আজকে যদি আমি না থাকতাম তাহলে কতো ক্ষতি হতো বুঝতে পারছো। তোমাকে বাসায়ও দেখি নিজের মন মতো চলো, কারো কথার কোনো গুরুত্ব দেও না। আর আমাকে এতো বিশ্বাস করো কেনো? তোমার কোনো ধারণা আছে আমি কি কি করতে পারি? ধ্যাত্ আমার সাথে কথা বলো না তো ”
“আপনি রাগ করবেন না। আমার ভুল হয়ে গেছে ”
“আচ্ছা এবারের মতো মাফ করে দিচ্ছি যাও ”
“আপনাকে বিশ্বাস কেনো করি এটা কেনো বললেন “?
” কারন তোমার মধ্যে খারাপ কিছু দেখলে তোমার ক্ষতি করতে আমার সময় লাগবে না তাই ”
“ওহ্ তাই কিন্তু আমি তো খারাপ কিছু করবো না, আমি যে এতোগুলা ভালো”
“তুমি একটুও ভালো না, বড়দের কথা গুরুত্ব দেও না ”
“দেই তো যদি আমরা মন মতো হয় তাহলে ”
“এসব চলবে না ”
“হুম, এখন চলেন তো ভালো করে ঘুরে আসি ”
আলিব এবার ইভার হাতে ধরে সুন্দরবন ভালো করে ঘুরিয়ে দেখালো। সুন্দরবনের নদীর ঘাটে খুব সুন্দর অদ্ভুত রকমের ময়ূর পেখম নৌকা রাখা। নৌকাটা দেখে ইভা মনে মনে বলছে “আলিবকে বলবো এরকম নৌকায় উঠবো কিন্তু না থাক এতো চাওয়া ঠিক হবে না ”
আলিব ইভার সামনে বেলীফুলের মালা ঝুলিয়ে বলে,
“আমার পক্ষ্য থেকে মহারানী জন্য ছোট উপহার ”
“ধন্যবাদ রাজামশাইয়, এবার চলুন বাসায় ফিরতে হবে ”
“এখনই বাসায় যাবে তাহলে আমি নৌকা এনেছি কেনো?”
“সত্যি এই নৌকা আপনি এনেছেন? ”
“হুম শুধু তোমার জন্য ”
আশেপাশের লোকজন তাকিয়ে আছে এতো সুন্দর নৌকা দেখে। কেউ বলছে কোনো জমিদার পরিবারের মেয়ে এসেছে। ইভা একা একা কথা বলে এটা লক্ষ্য করে কেউ বলছে মেয়েটার মাথায় সমস্যা আছে।
ইভা নৌকায় উঠলো, আলিব বৈঠা বাইছে। ইভা মন চাইছে যুগ যুগ ধরে আলিবের সাথে থাকতে। আলিবের মধ্যে অদ্ভুত মায়া ভালো লাগা আছে তাই ইভা বলে ফেললো,
“আপনি কি সবার সামনে দৃশ্য হয়ে, সাধারণ ভাবে বাঁচতে পারেন না? আপনার মধ্যে কেমন জানো মায়া আছে আমার খুব ভালো লাগে ”
“তোমার জন্য ফিরে আসা সেহেতু তোমার ভালো লাগা যুগ যুগ ধরে রাখবো ”
–বাবা রে মনে মনে কথা বললেও উনি শুনতে পায় আজকাল দেখি মনে মনে কথা বলা যাবে না। (ইভা মনে মনে বলছে)
“এই মহারানী মনের কথা আমার কাছে কিছু প্রকাশ করলেও পারো ”
“প্রকাশ করার আগেই তো আপনি জেনে যান ”
“হাহাহাহ্ আচ্ছা বেশ জানবো না ”
“জানতে বারণ করি নি ”
“তুমি যে কি চাও নিজেও জানো না এই বলো মনে মনে বলবে না আর এই বলো বারণ করি নি ”
“হয়েছে থামেন এবার বাসায় চলুন ”
“যথা আগ্গা মহারানী ”
ইভা বাসায় এসেছে। আজকে ওর মন অনেক বেশি ভালো, আলিব সুন্দর একটা দিন উপহার দিলো। বার বার মনে পড়ছে আলিবের সাথে ঘোরার সময়টা, কতো ভালো হতো যদি ও সারাজীবন থাকতো।
ইভার মা রুমে এসে বললো,
-রেডি হয়ে নে, বিকেলে নানু বাড়ি যাবো।
-হঠাৎ নানু বাড়ি যাবে কেনো?
-রিয়াদের বিয়ে।
-রিয়াদ ভাইয়ার বিয়ে কি মজা, লিমা ওরা আজকে যাবে?
-ওরা সকালে রওনা দিছে। তোর বাবা অফিসের কাজ শেষ করে ছুটি নিয়ে আসবে তাই আমাদের বিকেলে যাওয়া।
-আচ্ছা ঠিক আছে আমি গোঁজ গাঁজ করে রাখছি।
বিকেলে ইভার নানু বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্য রওনা দিলো। গাড়ি থেকে নেমে দশ মিনিটের মতো হাঁটার পথ। ভ্যান গাড়ি চলে তাও খুব কম, পথে একটা ভ্যান পাওয়া গেছে কিন্তু দুজন যাত্রী আছে আর দুজন বসতে পারবে তাই ইভার দাদি আর ওর ছোট ভাইকে ভ্যান গাড়িতে উঠিয়ে দিলো। ইভার বাবা, মা, ইভা, ওর বোন হেটে যাচ্ছে। একজন লোক ওদের দেখে এগিয়ে আসে এসে বলে,
-এই মেয়ে তুমি এখানে কেনো? একশো বছর পরে সে তোমার জন্য ফিরে এসেছে। তাকে বাঁচাতে হলে কখনো বট গাছের বাড়ির আশেপাশে যাওয়া চলবে না।
ইভা বাবা বললো,
-আপনি এসব কি বলছেন? কে ফিরে এসেছে?
-তোমার মেয়ে নিরাপদ নয় তাকে সাবধানে রেখো।
-আপনার কথা ঠিক বুঝলাম না (ইভার বাবা)
লোকটা কথার উওর না দিয়ে চলে গেলো। ইভার মা বেশ ভয় পেয়েছে এরকম কথা শুনে। বট গাছের বাড়ির তো অনেক দূরে তাহলে নিরাপদ নয় কেনো সেটা বুঝলো না। ইভা নানু বাড়ি যাওয়ার পরে আলিবের সাথে কথা হয় নি সবার সাথে আড্ডায় মেতে আছে।
রাতে সেই লোকটা আবার এসেছে,,,,,,
চলবে,,,,,,
টিউটোরিয়ালটি কেমন লেগেছে মন্তব্য করুন!